উত্তর
আধুনিক জীবনানন্দ দাশ
যার বহুমাত্রিক প্রতিভা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে
জীবনানন্দ
দাশের ব্যক্তিজীবন এবং কবিতার আলোচনা মানে আধুনিকতার আলোচনা। যুগযন্ত্রণা, আধুনিক জীবন দর্শন, প্রজ্ঞা ও চেতনার আলোচনা।
জীবনানন্দের কবিতার বা তাঁর কথা সাহিত্যের নির্মোহ আলোচনা অত্যন্ত জরুরী।
ঢাকার
জাতীয় জাদুঘরের সভা কক্ষে ১৫ অক্টোবর ‘কবি
জীবনানন্দ দাশের জীবন ও সাহিত্য কর্ম’ শীর্ষক এক গোল টেবিল
বৈঠকে মন্তব্য করেন বিভিন্ন বক্তারা। কবি আসাদ চৌধুরীর পরিচালনায় এই বৈঠক উদ্বোধন
করেন প্রধান মন্ত্রির অর্থনীতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড মশিউর রহমান।
এই
মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন- আসাদ মান্নান, ফারুক
মঈনুদ্দিন, ফরিদ কবির, বেগম আখতার
হোসেন, আহমদ মাযহার, শাখাওয়াত টিপু,
ওবায়েদ আকাশ, মুজিব মেহেদী, পিয়াস মজিদ, কামরুল হাসান প্রমুখ।
বৈঠকে
স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় জাদুঘরের মহা পরিচালক এবং বিশিষ্ঠ জীবনানন্দ-গবেষক ফয়জুল
লতিফ চৌধুরী বলেন, উত্তর আধুনিক এই কবির
বহুমাত্রিক প্রতিভা আমাদে্র সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাই জীবনানন্দ দাশের সাহিত্য
বেশি করে চর্চা করা প্রয়োজন।


১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যামে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রি হন। এর পর আরো দু’বার প্রধানমন্ত্রি নির্বাচিত হন। বর্তমানেও তিনি বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রি।
তিনি দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কার পান। সেগুলোর কয়েকটি হলো- বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সেরেস পদক, ইউনেসকোর পার্ল এস বাক পদক, মাদার তেরেসা পদক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতি পদক, আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালের রাষ্ট্রপ্রধান পদক, রোটারি ফাউন্ডেশনের পল হ্যারিস ফেলোশিপ, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার; গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সৃজনশীল লেখালেখির জন্য বিশ্বের খ্যাতনামা ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ কর্তৃক সম্মানজনক 'সাউথ-সাউথ' পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশন উপলক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় থাকায় এবারের জন্মদিনটিও দেশের বাইরে কাটাতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।
তাঁকে সাতদিনের শুভেচ্ছা।উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশন উপলক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় থাকায় এবারের জন্মদিনটিও দেশের বাইরে কাটাতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।
'জীবনের শুদ্ধতার জন্য শত্রুর কাছে আমার দারুণ ঋণ আছে'
===================
শত্রুদের খুব গুরুত্ব দিতে চাই।
শত্রু আছে বলে
নিজেকে শুদ্ধ রাখার চেষ্টা করি।
===================
সাতদিনঃ নিজের লেখালেখিকে আপনি কি ভাবে মূল্যায়ন করেন?
তপন বাগচী: আমার দায় লেখার। বড়জোর পত্রিকা কিংবা প্রকাশকের কাছে পাঠানোর দায় পালন করতে পারি। আমার লেখার মূল্যায়ন করার দায় আমার নয়। ওটি পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম। সমালোচক এসেই কিছু বলতে পারেন। তবে হ্যাঁ, নিজের লেখা যখন পড়ি, তখন নিজে পাঠকও বটে! পাঠকের মূল্যায়ন হিসেবে বলা যায়, ‘তপন বাগচী কি আদৌ লেখক? কী লেখে কেমন লেখে তা তো জানি না। লেখে এইটুকুই জানি। আরো লিখুক। পাঠক হিসেবে আমি না হলেও কেউ না কেউ তো পড়বেন। তখন তাঁর লেখক-জীবন সার্থক হয়ে উঠবে।’ আর সমালোচক হিসেবে বলা যায়, ‘তপন বাগচী ক্রমে অতিপ্রজ হয়ে উঠেছেন। রবীন্দ্রনাথ কিংবা তারাশঙ্করের জন্য এটি ভালো হলেও তপন বাগচীর যখন এটি মঙ্গল বয়ে না-ও আনতে পারে। আরেকটি কথা, তপন বাগচী তাঁর সময়ে অর্থাৎ নব্বই দশকের কবি হলেও ছড়া, কিশোরগল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস সবদিকেই হাত পাকানোয় নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনছেন। তাঁর বন্ধুরা নিজেদের গুরুত্বকে উঁচিয়ে ধরার মানসে তপন বাগচীকে ছড়াকার কিংবা প্রবন্ধকার বলে চালিয়ে কবি-তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বৃথা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাচ্ছেন। হাহাহা।’
সাতদিনঃ আপনার প্রথম লেখা এবং প্রথম বইয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
তপন বাগচী: প্রথম লেখা একটি কবিতা (নাকি পদ্য? নাকি ছড়া?)। লিখেছিলাম বাবা তুষ্টচরণ বাগচীর প্রেরণায়। জসীমউদ্দীনের লেখার অনুকরণে। ওটি ছাপা হয় নি। তবে বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন তাঁর পুত্রের কবি-প্রতিভা দেখে। প্রথম কবিতা প্রকাশ পায় স্বসম্পাদিত দেয়ালপত্রিকা ‘কিশলয়’-এ, কদমাবাড়ী, মাদারীপুরে। আমার শিক্ষক অনিলকৃষ্ণ দত্ত বুঝেছিলেন যে তাঁর প্রিয় ছাত্র একদিন কবি হবে। প্রথম ছাপা কবিতা ফরিদপুরে ‘সাপ্তাহিক আলমোয়াজ্জিন’-এ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। ওটা জেনে রবীন্দ্রনাথের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, জানি না। তবে ছাপার অক্ষরে নাম দেখে নিজেকে কবি ভাবতে শুরু করেছিলাম। জাতীয় পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় একটি সনেট দৈনিক ‘বাংলার বাণী’তে। বন্ধুদের কাছে তখন কবি স্বীকৃতি পেতে আর বাঁধার রইল না। আর প্রথম বই হলো কিশোরগল্পের বই। কবিতার বই চলে না প্রকাশক পাচ্ছিলাম না। জ্যোৎস্না প্রকাশনার মালিক স্বপন দত্তের ছোটভাই অরূপ দত্ত একদিন বললেন, ‘দাদা, গল্পের বই হলে ছাপতে পারতাম। কিন্তু আপনি তো কবিতা লেখেন! আমি বললাম যে তাহলে গল্পের বই-ই দিচ্ছি।’ আমার তখন মাত্র ২টি গল্প লেখা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই লিখে ফেললাম আরো ৫টা কিশোরগল্প। তাই নিয়ে আমার প্রথম বই ‘শুভর শখের গোয়েন্দাগিরি’। এই গল্পগুলো লেখার পরোক্ষ প্রেরণার জন্য বন্ধু অরূপ দত্তের কাছে আমার ঋণ স্বীকার করছি।
সাতদিনঃ বাংলা সাহিত্যের কোন শাখা তুলনামুলক ভাবে সমৃদ্ধ বলে আপনি মনে করেন?
তপন বাগচী: নিঃসন্দেহে কবিতা।
সাতদিনঃ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির যুগে সাহিত্য জীবনে কতটা প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
তপন বাগচী: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে সাহিত্যের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আজকে বিজ্ঞানের যানবাহন কি মহাভারতের (আমি একে সাহিত্যগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করি) রথের চেয়ে বেশি দ্রতগামী? আজকের ক্ষেপণাস্ত্র কি কবির কল্পনার চেয়ে বেশি বিধ্বংসী? সাহিত্যের অনেক কল্পনা থেকে রসদ নিয়ে বিজ্ঞানীরা তাঁর আবিষ্কার সম্পন্ন করেছেন। আবার বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলেই শ্র“তি থেকে পাঠের সুযোগ এসেছে। এসেছে গ্রন্থ মুদ্রণব্যবস্থা। এখনকার ইন্টারনেট ামাদের সাহিত্যেকে পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। সাহিত্য ছাড়া জীবন চলে নাকি? নাকি কোনদিন চলত? বিজ্ঞানী বা প্রযুক্তিবিদ তাঁর কাজের আগে যে ভাবনা করেন, ওটা কি সাহিত্য নয়?
সাতদিনঃ আপনার প্রিয় লেখক সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
তপন বাগচী: আমার প্রিয় লেখকের তালিকা বড় দীর্ঘ। এই ক্ষেত্রে আমি বহুগামী। বিচিত্রগামী। আলাওল, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, নজরুল, জসীমউদ্দীন, শামসুর রাহমান, বিনয় মজুমদার, নির্মলেন্দু গুণ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, আবিদ আানোয়ার আমার প্রিয় কবি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, প্রমথ চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, শহীদুল জহির, হরিশংকর জলদাস আমার গদ্যলেখক।
সাতদিনঃ আপনার নিজের প্রিয় লেখা কোনটি এবং কেনো?

সাতদিনঃ আপনার লেখালেখির পেছনে মূল প্রেরণা কি?
তপন বাগচী: মা-মাটি-মানুষ। ছোটবেলায় এই নামের একটি যাত্রাপালা দেখেছিলাম। তখন থেকেই এই শব্দবন্ধ আমার অন্তরে গেঁথে গিয়েছিল। এখন দেখি মমতাদিদিও তাঁর স্লোগানে এই অভিধা যুক্ত করেছেন। আমি আমার মায়ের প্রতি, মাটির প্রতি, মানুষের প্রতি দায় অনুভব করি। পিতার প্রেরণায় লেখার জন্য কলম ধরেছিলাম। সেই কলম ছাড়তে চাই না।
সাতদিনঃ শর্ত স্বাপেক্ষে লেখালেখি ছেড়ে দিয়ে বললে কি ছাড়তে পারবেন?
তপন বাগচী: পারব। শর্তটি যদি হয় আমার পক্ষের। আমি যদি দেখি যে এই বিশ্বের একটি মানুষও আর না খেয়ে মরছে না। এই বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য যদি বাসস্থান হয়, প্রতিটি মানুষ যদি পোষাক পায়, চিকিৎসা পায়, শিক্ষা- মানুষের মৌলিক মানবিক অধিখার যদি প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে আমি লেখা ছেড়ে দিতে রাজি। ব্র্যাকেটে বলে রাখি, আমার এই শর্ত মেনে নিলে আর আমার কারোরই লেখার দরকার হবে না!
সাতদিনঃ এক জন লেখকের ভেতরের ‘মানুষস্বত্তা’কে আপনি কি ভাবে ব্যাখ্যা করেন?
তপন বাগচী: প্রশ্নটা বুঝতে পারলাম না। মানুষসত্তা তো ভেতেরই থাকে। এটা ব্যাখ্যার অতীত আমার কাছে।
সাতদিনঃ মৃত্যুকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
তপন বাগচী: মৃত্যু একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। জন্ম যেমন নিবারণ করা যায় নি, মৃত্যুকে কে খণ্ডাবে! মৃত্যু যেন অস্বাভাবিক না হয়। ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি’ পেলে আমি মৃত্যুকে অঙ্গীকার করতে রাজি।
সাতদিনঃ লেখালেখি ছাড়া আর কি আপনার কাছে প্রিয় এবং অপ্রিয়?
তপন বাগচী: লেখালেখি ছাড়া আমার কাছে প্রিয় হচ্ছে পড়া, বই পড়া। আর অপ্রিয় হচ্ছে অলসতা, অনিদ্রা আর পরনিন্দা।
সাতদিনঃ সাহিত্যের বাইরে আরো একটি প্রশ্ন, আপনার বন্ধু এবং শ্ত্রুকে কি ভাবে মূল্যায়ন করেন?
তপন বাগচী: আমার বন্ধুদের প্রতি তেমন মনোযোগ দিতে চাই না। সুখে-অসুখে সঙ্গে পেতে চাই, সঙ্গ দিতে চাই। আর শত্রুদের আমি খুব গুরুত্ব দিতে চাই। কারণ শত্রু আছে বলেই আমরা সাবধানে থাকি। স্বাধীনতার শত্রু আছে বলেই স্বাধীনতার কথা বারবার উচ্চারণ করি। পথে ছিনতাইকারী আছে বলেই সাবধানে পথ চলি। ডাকাত আছে বলেই ঘরের দরোজা বন্ধ করি। পকেটমার আছে বলেই পকেট সামলে রাখি। শত্রু আছে বলে নিজেকে শুদ্ধ রাখার চেষ্টা করি। জীবনের শুদ্ধতার জন্য তাই শত্রুর কাছে আমার দারুণ ঋণ আছে!
===============
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে গান
লেখিকা তসলিমা
নাসরিনকে নিয়ে গান করলেন তরুণ শিল্পী ও সুরকার শতাব্দী ভব। গানটির কথা, সুর
ভব নিজেই করেছেন। গানটি ইউটিউব ও ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে গত ২৩ আগস্ট। ২৫
আগস্ট তসলিমা নাসরিনের জন্মদিনকে সামনে রেখেই ভব এ গানটি করেছেন।
গানটির কথাগুলো এ
রকম- তুমি পুরুষতন্ত্র মৌলবাদের মুখোশে দিয়েছ টান/ ঘুমপাড়ানির দেশে গাও ঘুম
ভাঙানোর গান/ জলের ওপর কত সহজে আগুন জ্বালতে পারো/ উতল হাওয়ার দিনগুলোতেও বিবেকের
কড়া নাড়ো/ যুক্তির সংগ্রামে বদলে দিতে দিন/ স্বপ্নের ফেরিওয়ালা তসলিমা নাসরিন…।
রাইজিংবিডি ডট কমের
সৌজন্যে---------------------------------
'ভাত দে হারামজাদা...'

যিনি গঠন করেছিলেন- ‘পুরুষ
রক্ষা সমিতি’। বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন- 'একটি চুমুর
বিনিময়ে একটি কবিতা উৎসর্গ হবে' ইত্যাদি। এভাবেই তিনি নানা
সময়ে ষ্ট্যানবাজি করেছেন। এরশাদ, খালেদা, হাসিনার কাছ থেকে ইনিয়ে-বিনিয়ে নিয়েছেন
নানা সুবিধে। দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে ধানমন্ডি-১ বিশাল বাড়ি। নিয়েছেন- একুশে পদকসহ বাংলাদেশ
জুট মিলস করপোরেশন, বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি ও জাতীয়
গ্রন্থকেন্দ্রের বিভিন্ন পদের চাকরি।
তাঁর সেই কবিতা, কবিতা
পা্ঠের অডিও-ভিডিও, কবিতা লেখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হলোঃ
১] ভাত দে হারামজাদা’র
ভিডিও-অডিও
২] ভাত দে হারামজাদা/
রফিক আজাদ
ভীষন ক্ষুধার্ত আছিঃ
উদরে,
শারীরবৃত্ত ব্যেপে
অনুভূত হতে থাকে -
প্রতিপলে - সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
অনাবৃষ্টি যেমন
চরিত্রের শস্যক্ষেত্রে জ্বেলে দেয়
প্রভূত দাহন - তেমনি
ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ
দু'বেলা দু'মুঠো পেলে মোটে নেই অন্য কোনও দাবি
অনেক অনেক-কিছু চেয়ে
নিয়েছে,
সকলেই চায়ঃ
বাড়ি, গাড়ী, টাকাকড়ি- কারো বা খ্যাতির লোভ আছে;
আমার সামান্য দাবিঃ
পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর-
ভাত চাই-এই চাওয়া
সরাসরি - ঠান্ডা বা গরম,
সরূ বা দারুণ মোটা
রেশনের লাল চাল হ'লে
কোনো ক্ষতি নেই মাটির
শানকি ভর্তি ভাত চাইঃ
দু'বেলা দু'মুঠো পেলে ছেড়ে দেবো অন্য সব দাবি!
অযৌক্তিক লোভ নেই, এমনকি নেই যৌন ক্ষুধা-
চাইনি তো নাভিনিম্নে
পড়া শাড়ি,
শাড়ির মালিক;
যে চায় সে নিয়ে যাক -
যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে দাও -
জেনে রাখোঃ আমার ও সব
এ কোনও প্রয়োজন নেই।
যদি না মেটাতে পারো
আমার সামান্য এই দাবি,
তোমার সমস্ত রাজ্যে
দক্ষযজ্ঞ কান্ড ঘটে যাবে;
ক্ষুধার্তের কাছে নেই
ইষ্টানিষ্ট, আইন-কানুন -
সমুখে যা পাবো খেয়ে
নেবো অবলীলাক্রমে;
যদি বা দৈবাৎ সম্মুখে
তোমাকে,
ধর, পেয়ে যাই -
রাক্ষুসে ক্ষুধার
কাছে উপাদেয় উপাচার হবে।
সর্বপরিবেশগ্রাসী হ'লে সামান্য ভাতের ক্ষুধা
ভয়াবহ পরিনতি নিয়ে
আসে নিমন্ত্রণ করে!
দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা
অবধি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে
অবশেষে যথাক্রমে
খাবোঃ গাছপালা, নদী-নালা,
গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাথ, নর্দমার জলের প্রপাত,
চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব-প্রধান নারী,
উড্ডীন পতাকাসহ
খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী-
আমার ক্ষুধার কাছে
কিছুই ফেলনা নয় আজ।
ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো।
৩/ক] কবিতাটি কোন
পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছিলেন?
-'ভাত দে হারামজাদা...' কবিতাটি এক ধরনের প্রতারিত হয়ে
লেখা বলে মনে করি। মুক্তিযুদ্ধ কোনো দিনই এ দেশের বহু লোক মেনে নিতে পারেনি।
যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পরও বাংলাদেশ নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছিল। যাতে ভাঙাচোরা এ
দেশটি শক্ত করে দাঁড়াতে না পারে। তখন রংপুর অঞ্চলে মঙ্গা হলো। এর মধ্যে রংপুরের
মানুষের জন্য সাহায্য এনে চালবোঝাই জাহাজ ফেরত নিয়ে গেল আমেরিকা। সেটা নিয়ে দেশের
কিছু পত্রপত্রিকাও ষড়যন্ত্র শুরু করল। তার অংশ হিসেবে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে একটি
ছবি পত্রিকায় ছেপে দিল। জাল পরিয়ে আব্রু রক্ষা হয়! আমরা দেশের মানুষ এতটাই বেকুব
ছিলাম। আরেকটি ছবি আমাকে মারাত্দকভাবে আহত করেছিল। রংপুর ইস্টিশনে এক লোক বদ হজম
হয়ে বমি করেছিল। এক 'হারামজাদা' ফটোগ্রাফার
দুর্ভিক্ষ দেখানোর জন্য একটা বুভুক্ষ লোককে একশ টাকা দিয়ে ওই বমি খাওয়ার ভঙ্গি
পত্রিকায় প্রচার করে। কাগজে এসব দেখে 'ভাত দে হারামজাদা...'কবিতা লিখেছিলাম। আমিও বিভ্রান্ত হয়ে ওই কবিতা লিখি। আমি ওই কবিতা
প্রত্যাখ্যান করি। আসলে ভাত সারা পৃথিবীতে কখনই পাওয়া যায় না। অধিকাংশ লোক এক বেলা,
আধবেলা, আধপেটা খায়। একজন মহান মানুষের
বিরুদ্ধে যারা এই ষড়যন্ত্র করেছিল তাদেরকে আন্তরিভাবে ঘৃণা করি। এ কবিতাটির কথা
কেউ বললে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
খ] আপনার হাত ধরে
বাংলা কবিতায় সাবলীলভাবে 'হারামজাদা', 'পাদ দে', 'মুতে দেই' ও 'ভাত দে'র মতো প্রাত্যহিক শব্দ প্রবেশ করেছে। এ বিষয়ে
কিছু বলুন?
-এসব শব্দ আমার
কবিতায় এঙ্প্রেশনের তীব্রতা ও বিদ্রোহের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এসেছে। এক সময় মানুষ
সম্পর্কে আমার খুবই খারাপ ধারণা হয়েছিল। তখন একটি লাইন এসেছিল 'মানুষ শব্দটি লিখে তাতে আমি মুতে দেই...'। এটা
মানুষের অমানবিক ব্যবহার, বিচ্যুৎ আচরণের জন্য এই বাক্যটি
এসেছিল, এখানে আমার কোনো দোষ নেই।
গ] একবার একটি
পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের অভাবে আপনি নিজের জন্য চুমুর বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন, বিষয়টি কি সত্য?
হ্যাঁ, আমি তখন বাংলা একাডেমিতে চাকরি করতাম। তখন 'বিচিত্রা'
পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন কবি শাহাদাৎ চৌধুরী। তিনি আমাকে
ডেকে বললেন, আমাদের কিছু সৃষ্টিশীল বিজ্ঞাপন তৈরি করার
দরকার। আমি বললাম, তাহলে আমি চুমুর বিজ্ঞাপন দেই। 'একটি চুমুর বিনিময়ে একটি কবিতা উৎসর্গ হবে'। আসলে এর
মাধ্যমে আমি দেখতে চেয়েছিলাম সমাজে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আসলে চুমু মানে যে
ঠোঁটে চুমু, আমি কিন্তু তা বুঝাইনি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ
তা-ই বুঝল। মিরপুর থেকে এক মেয়ে লিখে পাঠাল 'ইচ্ছে তো হয়,
তবে লোকলজ্জার ভয়ে পারি না।' আবার কেউ কেউ
ইনভেলাপে করে কিছু অবাঞ্ছিত জিনিস পাঠায়। এর মধ্যে নাদিরা মজুমদার নামে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বাংলা একাডেমিতে আমার অফিসে এসে আমাকে বললেন, 'আমি রাজি'। আমি তখন বললাম, দয়া
করে আপনার হাত বাড়িয়ে দেন, আমি আপনার হাতে চুমু খাই। তারপর
আমি নাদিরার হাতে চুমু খেলাম। আর কয়েকদিনের মধ্যে নাদিরা আমার ভালো বন্ধুতে পরিণত
হলো।(দ্রঃ 'কবিতা তীব্রতা ও দ্রোহের
বহিঃপ্রকাশ'/ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন/ জুলাই ১৮, ২০১৪,
ঢাকা।)
........................সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের সম্পাদনায়
বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা
সরসিজ আলীম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আমরা গণমানুষের নেতা হিসেবে জানি। আমাদের জাতীয় জীবনের বিভিন্ন স্তরের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ ব’লে জানি। আমাদের জাতীয় জনযুদ্ধের, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি হিসেব জানি। আমাদের ইতিহাসের পৃষ্ঠাব্যাপী ট্রাজেডির মহানায়ক হিসেবে জানি। আমাদের বন্ধু হিসেবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে জানি। আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একজন অসফল নেতৃত্ব ব’লে জানি। অবশ্যই আমরা জাতির জনক হিসেবে জানি।
প্রচলিত ধারার সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের ভেতরে ব’সে অনেকটাই অপ্রস্তুত একটা পার্টি ও পার্টি কর্মীদের নেতৃত্বে আসীন থেকে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার বৈপ্লবীক ঘোষণা ও পদক্ষেপ গ্রহন করাকে প্রতিবিপ্লবী আগাছা ও পরগাছা শক্তিকে সংগঠিত করতেই কেবল উৎসাহিত করেছে। তাইতো দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক চক্রান্তই কেবল বারবার সফল হয়েছে। প্রতিবিপ্লবী শক্তি, গণমানুষের বিরুদ্ধ শক্তি আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েও প্রতিষ্ঠা পেতে চেয়েছে। আমরা হয়েছি বিস্মিত, ক্ষুব্ধ, মর্মাহত, নিগৃহীত। ঘোর অন্ধকারের ভেতরে আমরা এবজন মহান দরদী মানুষকে স্মরণ করি। বঙ্গবন্ধুর সকল অস্তিত্বের মাঝেই আমরা আমাদের প্রাণের স্পন্দন খুঁজে ফিরি।
![]() |
শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন প্রধান মন্ত্রি শেখ হাসিনা |
মহান কার্ল মার্কস-এঙ্গেলসের বৈজ্ঞানিক দর্শন ও পথ নির্দেশনা নিয়ে আমরা যুগে যুগে দেশে দেশে মুক্তির লড়াই ক’রে চলি। কমরেড লেনিন, মাও জে দঙের বিপ্লবী নির্দেশনাকে সাথে নিয়ে নিজ নিজ দেশে দেশে নতুন বিপ্লব সংগঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আর বঙ্গবন্ধুকে আমাদের নব নব প্রেরণায় জাগ্রত রেখেছি। বিশ্বাস রেখেছি।
আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা-দীক্ষার বাইরে থাকা বিশাল একটা জনগোষ্ঠিকে আমাদের রাজনৈতিক ভোজবাজিতে বোকা বানিয়ে রাখতে চাইছি বারবার। এই বোকা মানুষদের চোখের সামনেই এই দেশটাকে টেনে-ছিড়ে খেয়ে যাচ্ছি কত সহজেই! তাইতো আমাদের জাতির মহান মানুষদেরকে আমাদের স্বার্থেই হয় তাঁকে হেয় ক’রে দেখছি, অথবা অতিরঞ্জিত ক’রে দেখছি। এই সময়তে আমাদের জাতির গর্বিত সন্তানকে আবেগহীন থেকে, নির্মোহ থেকে মূল্যায়নের প্রয়াস চালাতে হচ্ছে। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল সম্পাদিত স্বল্প পরিসরের সংকলন ‘ বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা’ এর একটি সূচনা প্রয়াস মাত্র। একজন মুক্তবুদ্ধির মানুষ হিসেবে, এই স্বাধীন বাংলার মানুষ হিসেবে, একজন সৎ উত্তরাধিকার হিসেব, একজন লেখকের এটা একটা দায়।
এই সংকলনে স্থান পেয়েছে আরবী ভাষার কবিতা। মূল: মওলানা শেখ আবদুল হালিম। ভাবানুবাদ: নির্মলেন্দু গুণ। জাপানী ভাষার কবিতাটা মাৎসুঅ শুকুইয়া নিজেই ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। উর্দু ভাষার কবিতা, মূল: নওশাদ নূরী। অনুবাদ: আসাদ চৌধুরী। উর্দু কবিতা, মূল: সৈয়দ আসিফ শাহাকার। অনুবাদ: মোহাম্মদ সাদিক। উর্দু কবিতা, মূল: আহমেদ সালিম। ভাষান্তর: সোহরাব হাসান। ইংরেজি কবিতা, মূল: লোরি এ্যান ওয়ালশ। ভাবানুবাদ: টিপু ভাট্রা। মনিপুরী কবিতা, মূল: এলাংবম নীলকান্ত সিংহ। অনুবাদ: এ.কে. শেরাম। মনিপুরী কবিতা, মূল: এলাংবম নীলকান্ত। অনুবাদ: এ.কে. শেরাম। এ.কে. শেরামের মনিপুরী কবিতাটি নিজেই অনুবাদ করেছেন। বিঞ্চুপ্রিয়া ভাষার কবিতা, মূল: নন্দেশ্বর সিংহ। অনুবাদ: রণজিত সিংহ। ইভিকা পাইশেক্কির বসনিয়া কবিতা। সুইডিশ কবিতা, লিয়াকত হোসেন নিজেই অনুবাদ করেছেন। জার্মানি কবিতা, মূল: গিয়ার্ড লুইপকে। অনুবাদ: সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল।
সম্পাদকের ভূমিকাটি বেশ তথ্য সমৃদ্ধ। কবিতা পড়ার আগে ভূমিকাটা পাঠ করা জরুরি। একটা জাতির শোককে দেশ-কাল ছাপিয়ে মুক্তবুদ্ধির সব মানুষকেই আহত করে, দেশে দেশে কালে কালে কবিদের রচনা থেকে জানা যায়। এ সংকলন থেকে আমরা সেটাই বুঝতে পারি। অলংকরণ মনমূগ্ধকর। শিল্পীদের তালিকাও দীর্ঘ। শিল্পীরা সবাই স্বনামে খ্যাত। এ স্বল্প পরিসরের সংকলন আমাদের পাঠক মনকে পরিতৃপ্ত করে না। করতে পারে না। এটি একটি আধা-খেচড়া সংকলন। ভবিষ্যতে বিশাল পরিব্যাপ্তি নিয়ে একটা সমৃদ্ধ সংকলন আমরা আশা করতে পারি। প্রতীক্ষায় থাকবো।
বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা।
সম্পাদনা: সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী। অলংকরণ: কাইয়ুম চৌধুরী. হাশেম খান, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, রফিকুন নবী, সৈয়দ এনায়েত হোসেন, মামুন কায়সার, জালাল আহমেদ, নাজিব তারেক। প্রকাশক: স্বরব্যঞ্জন। মূল্য: ৫০ টাকা।
===============
নারীরা যদি সমকামী হত, বেঁচে যেত/ তসলিমা নাসরিন

পুরুষ যা করে, তা অনেকেরই জানা। কিন্তু শরীর নিয়ে কী করে? নারীর প্রতি যেহেতু পুরুষের কোনও শ্রদ্ধা নেই, নারীর শরীরের প্রতিও নেই। নারীর শরীর পাওয়া পুরুষের জন্য বাঘের হরিণ পাওয়ার মতো। হরিণের জন্য কোনও
শ্রদ্ধাবোধ বাঘের নেই। ছিঁড়ে খেতে বাঘের কোনও গ্লানি নেই। খিদে পেয়েছে, শিকার করেছে, খেয়েছে। খেয়ে ঢেঁকুর তুলতেতুলতে নিজের টেরিটরিতে ফিরে যাবে, ফের খিদে পেলে ঝাঁপিয়ে পড়বে নতুন কোনও হরিণ পেতে, না পেলে মোষ বা
মানুষ।
পুরুষেরা কটকটি কামড়ানোর মতো নারীর ঠোঁট কামড়ালো, এর নাম দিয়ে দিল চুম্বন। যে নারী এভাবেই চুম্বনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে, সে তো চুম্বন বলতে তা-ই
বোঝে, ধারালো দাঁতের কামড়, ঠোঁট ফুলে যাওয়া, ছিঁড়ে যাওয়া, রক্তাক্ত হওয়া। ঠোঁট কামড়ানোর পর পুরুষেরা নারীর বুক নিয়ে পড়ে। দলে পিষে সর্বনাশ করে। ক্ষণে ক্ষণে খামচে ধরে। নখে ছেঁড়ে, দাঁতে কাটে। নারীকে ভালোবাসলে, নারীর শরীরকেও ভালোবাসতে পারতো পুরুষ, ভালোবাসলে আঙুল নরম হত, দাঁত নখ লুকিয়ে থাকতো। পুরুষ নিজের আনন্দ ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না। নারীর কিসে ভালো লাগবে, কিসে লাগবে না, তা জানার চেষ্টা তারা কোনওদিন করেনি। জানলেও গুরুত্ব দেয়নি, নারীর সুখ অসুখের তোয়াক্কা পুরুষ করেনি কখনও।
নারীও অনেক সময় জানে না, কী করলে তাদের ভালো লাগবে, কী করলে শরীরে সুখ হবে। নারীকে যেভাবে যা বোঝায় পুরুষ, নারী সেভাবেই বোঝে। তার কি আর আলাদা করে নিজের মাথা ও হৃদয় খাটিয়ে কিছু বোঝার ক্ষমতা আছে? নেই।
শরীরের সম্পর্কে পুরুষ হল 'দ্য মাস্টার, মেগালোম্যানিয়াক ম্যাচো', আর নারী তার ক্রীড়নক। পুরুষ সুপিরিয়র, নারী ইনফিরিয়র। পুরুষ অ্যাকটিভ। নারী প্যাসিভ।
নারী প্যাসিভ না হলে পুরুষের মুশকিল হয়। হরিণ নড়েচড়ে উঠলে বাঘের ভক্ষণে যেমন মুশকিল হয়, তেমন। জগতে পুরুষই রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, ধর্মে, অধর্মে, সমাজে, সংসারে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-
সংস্কৃতিতে মহান মস্তান হয়ে বসে আছে। এই নীতি রীতিগুলো পুরুষময় করে রাখার জন্য পুরুষেরা ভয়ংকর রকম অ্যাকটিভ। এই অ্যাকটিভ পুরুষ বিছানায় গিয়ে নারী নামক ভোগের বস্তুটিকে কী করে অ্যালাউ করবে অ্যাকটিভ হওয়ার? অসম্ভব। ইগোর ঘরে আগুন জ্বলবে। পুরুষ ততটুকুই নড়তে দেবে নারীকে, যতটা নড়ন হলে পুরুষের গায়ে পুলক লাগে।
বাৎসায়নমশাই চোষট্টি কলার কথা জোর গলায় বলে গেলেও এক মিশনারি কলাতেই তৃপ্ত বাঙালিবাবুরা, বাকি তেষট্টি কলার পেছনে সময় খরচ না করে নারীকে প্যাসিভ বা পুঁইশাক বানিয়ে রাখার কলা কৌশল ভালো রপ্ত করেছেন।
পুরুষের রসবোধ কম। কম বলেই নারীর রসবোধ নিয়ে আতংকিত তারা। রসক্ষরণ না হলে যাত্রা মসৃণ হয় না, জানার পরও রসক্ষরণের রাস্তায় পুরুষের যেতে বড় আপত্তি বা আলসেমি। পুরুষ প্রস্তুত সুতরাং সব্বাইকে প্রস্তুত হতে হবে। ঘোড়া প্রস্তুত, লাগাম প্রস্তুত। অর্ডার অর্ডার। এক তুড়িতে পুরুষ গ্রহণে প্রস্তুত হও নারী। তানাহলে তুমি আর নারী কীসের? তুমি আর সেবিকা কীসের? আনন্দদায়িনী, মনোরঞ্জনী কীসের? পুরুষের সুখশান্তিস্বস্তির জন্য আত্দাহুতি দিতে নারী সর্বত্র এক পায়ে খাড়া।
শীর্ষসুখ জানে নারী? ক'জন নারী জানে? নারী জানে জগতের যত সুখ, সবই পুরুষের জন্য। নারীর যে একেবারে সুখ নেই তা নয়, নারীর সুখ পুরুষকে সুখ দিয়ে। নারীর অন্য সুখ থাকতে নেই। আনন্দ বলতে কিছু অনুভব করতে নেই। পুরুষ এভাবেই যুগ যুগ ধরে নারীর মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়েছে ত্যাগী হওয়ার মন্ত্র। নারীর ত্যাগই পুরুষের সবচেয়ে বেশি প্রার্থনীয়। নারী তার নিজস্বতা, তার পৃথক অস্তিত্ব, তার সাধ, তার সুখ সবই সানন্দে ত্যাগ করবে আর এই ত্যাগকেই পুরুষ তাড়িয়ে তাড়িয়ে ভোগ করবে। নারীর ত্যাগএর মতো এত সুস্বাদু আর উপাদেয় জগতে আর কোনও খাদ্য নেই।
নারীরা যদি সমকামী হত, বেঁচে যেত। অসমকামী হওয়ার অসুবিধে হল, অনাদর, অবহেলা, অপমান, অসন্তোষকে একরকম সঙ্গী করেই জীবন কাটাতে বাধ্য হতে হয়। পুরুষ পালকের মতো করে স্পর্শ করবে নারীর সারা শরীরে, নারী একটু একটু করে কুঁড়ি যেমন ফুল হয়ে ফোটে, তেমন ফুটবে। বাঘিনীর মতো কামার্ত চোখে তাকাবে, হরিণের মতো কাতর চোখে নয়। পুরুষের নিঃশ্বাসে স্পর্শে, ঘামে গন্ধে, কামে, কাঙ্ক্ষায় উপচে উঠবে তীব্র প্রেম। ওঠে কি? না। দৈত্যের মতো উঠে আসে ধর্ষণেচ্ছা। মেগালোমেনিয়া। মাচিসমো। নারীকে পিষে নিংড়ে ছোবড়া করে দেওয়ার পুরুষিক সুখ।
এ জগত পুরুষের। ভারতবর্ষ তো আরও বেশি পুরুষের। পুরুষ কামনা করবে নারীকে, পুরুষের যখন খুশি, তখন। নারীর কামনা বাসনা থাকতে নেই। থাকলেও প্রকাশ করতে নেই। নারীর শরীর জাগতে নেই, জাগলে ঘুম পাড়িয়ে রাখাই মঙ্গল। নারীর এগিয়ে আসতে নেই। চুমু খেতে নেই। যৌনতায় নারী প্রধান ভূমিকা নিতে পারে না। নারী যৌনপ্রভু নয়, 'যৌনদাসী'। এই চরিত্রটি সযতনে নারীকে উপহার দিয়েছে পুরুষ। যৌনতায় নারী যদি সঙ্গীর ভূমিকাও নেয়, তবুও পুরুষের পিলে চমকে ওঠে, শিশ্ন শিথিল হয়। যতক্ষণ না নারী যৌনদাসীর ভূমিকায় নামছে, ততক্ষণ অবধি পুরুষের উত্থান অনিশ্চিত।
নারী যৌনতৃষ্ণায় কাতরালে সে নারী মন্দ, পুরুষ যৌনতৃষ্ণায় কাতরালে পুরুষ বীর্যবান, শৌর্যবান। এই বৈষম্য নিয়ে সত্যিকার সুস্থ কোনও যৌনসম্পর্ক কি হতে পারে নারী পুরুষে? না। পারে না। ঘরে ঘরে নারী-পুরুষ দুজন মিলে যে যৌনসম্পর্ক করছে, তাকে কথ্য বাংলায় বলা হয় 'পুরুষ নারীকে করছে'। মুখের ভাষা থেকেই কিন্তু বেরিয়ে আসে বৈষম্যের বীভৎস চিত্র। 'ওরা করছে' বদলে 'ও করছে'। একজন কাজ করছে, আরেকজন বসে আছে, ব্যাপারটা এরকম। যৌনতায় নারীর কোনও ভূমিকা নেই, থাকতে নেই- তা সর্বজনমান্য রায়।
উত্থানরহিতে জগত ভর্তি। অথচ দেখলে বোঝার জো নেই। কারও লজ্জা নেই, মাথা হেঁট নেই, দুশ্চিন্তা নেই। উত্থানরহিতদের মস্তক কিন্তু উত্থিত থাকে। আর যে নারীরা উত্থানরহিতদের শিকার, তারাই বরং মাথা নত করে দিন কাটায়। দুঃসহ রাত্তির কাটায়। নারী যৌনতৃপ্তি পাক, এটা আন্তরিকভাবে খুব বেশি উত্থানরহিত কি চায়? চাইলে চেষ্টা থাকতো নিজেকে সংশোধনের। যৌনতার নামে দিনের পর দিন নারীর ওপর অত্যাচার চালাতো না।'নারী স্বাধীনতা'র অর্থ 'যৌন স্বাধীনতা'- এরকম মন্তব্য অনেকে করে। বিদ্রূপ করে বলা কথা। কথা কিন্তু সত্য। যৌন স্বাধীনতা ছাড়া নারী কখনও সত্যিকার স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে না, পারেনি। যে নারীর শরীর তার নিজের অধিকারের বাইরে চলে যায়, সেই নারী কোনও অর্থেই 'স্বাধীন নারী' নয়। শিক্ষা পেলেও, স্বনির্ভর হলেও, এই নারীবিদ্বেষী সমাজে নারীরা 'যৌনদাসিত্ব' থেকে মুক্তি পেতে পারে না। এই দাসিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে, এই বন্দিত্ব থেকে বেরিয়ে নারী যদি যৌন স্বাধীনতা পুরোপুরি ভোগ করতে পারে, তবেই সে নারীকে 'স্বাধীন' বলে মানবো আমি। যৌন স্বাধীনতা মানে পুরুষ পেলেই শুয়ে পড়া নয়, পুরুষের সঙ্গে না শোয়ার নামও যৌন স্বাধীনতা। চারদিকে ধর্ষকের ভিড়, এ সময় ধর্ষক-ধ্বজভঙ্গদের আহ্বানে আদেশে সাড়া না দেওয়ার জন্য যে যৌন স্বাধীনতা, তা থাকা প্রতিটি নারীর প্রয়োজন। ঠোঁট কামড়ে, স্তন খামচে যে পুরুষেরা পৌরুষ ফলাতে চায়, তারা যত যা-ই হোক না কেন, তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার যৌন স্বাধীনতা না পেলে মুক্তি নেই নারীর। যে পুরুষেরা কেবল নিজের যৌনসুখ নিয়ে মগ্ন, নারীর যৌনসুখ নিয়ে ভাবা যাদের কম্ম নয়, সেই পুরুষদের সবলে অস্বীকার করার যৌন-স্বাধীনতা যে করেই হোক অর্জন করুক নারী।
সূত্র: ফেসবুক স্ট্যাটাস
==========================
বনলতা সেন পতিতা ছিলেন! তাহলে
কি জীবনানন্দ খদ্দর?
আকবর আলি খান তাঁর “চাবিকাঠির
খোঁজে: নতুন আলোকে জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’” শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- বনলতা সেন পতিতা ছিলেন। তাহলে স্বাভাবিক
ভাবেই প্রশ্ন দাঁড়ায়- জীবনানন্দ দাশ কি তার খদ্দর ছিলেন! প্রথমা থেকে প্রকাশিত এই
বই ও বিষয় নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোতে হামীম কামরুল হক লিখেছেন-
‘বনলতা সম্ভবত একজন
পতিতা নারীও হতে পারে, যে তাকে দু দণ্ড শান্তি
দিয়েছিল, তুলনীয় পটভূমিতে আছে বিদিশা, প্রাচীন
ভারতে যে অঞ্চলটিতে প্রকট গণিকাবৃত্তি ছিল। তেমনি ছিল নাটোরে পতিতালয়। জীবনানন্দ
দিল্লিতে বেশ্যালয়ে গিয়েছিলেন। এসব প্রসঙ্গে তিনি অনেক পরে প্রকাশিত কবির ডায়েরি
নানান ভুক্তি থেকে হাজির করেছেন। ‘কুড়ি বছর পর’ কবিতার চাবিকাঠি ‘মনিয়া’—কোনো
পাখির নাম নয়, যা নিয়ে ভ্রান্তি ছিল পূর্ববর্তী প্রায় সব
সমালোচকের, অনুবাদ করতে গিয়েও ‘মুনিয়া
পাখি’ বলে ভুল করেছেন কেউ কেউ। এই মনিয়া ছিল পতুর্গিজ পাদরি
ও এক ভারতীয় নারীর অবৈধ সন্তান। এই নীলনয়না মেয়েটির প্রতি কবি টান বোধ করেছেন,
যার মৃত্যু হয়েছিল জলে ডুবে। নিজের খুড়োতো বোন বেবিকে ‘হাওয়ার রাত’ কবিতায় ‘বেবিলনের
রাণী’ শব্দে আড়াল দিয়েছেন কবি’। (দ্রঃ
বনলতা সেন: অভিনব ব্যাখ্যায়, বৈশ্বিক মাত্রায়/ হামীম কামরুল
হক, আগস্ট ০৮, ২০১৪, ঢাকা।)এছাড়াও জীবনানন্দ দাশ ‘পতুর্গিজ পাদরি’, ‘এক ভারতীয় নারীর অবৈধ সন্তান’, নিজের খুড়োতো বোন বেবির সাথেও অনৈতিক সম্পর্কের ইঙ্গিত করেছেন!
==============
রবীন্দ্রনাথের
পোস্টার
জিনাত জাহান খান


সেদিন স্কুল থেকে
বাড়ি ফিরছিলাম, বাজারের ভেতর থেকেই আসতে হয় বাড়ির পথে। হাটবার
ছিল, প্রচুর লোক, প্রচুর কেনাবেচা,
প্রচুর সামগ্রী।
ইশ!ভুলেই গিয়েছিলাম
যে আজ হাটবার – হাতে মাত্র পাঁচ টাকা আছে। কেন যে টাকা
বাড়িয়ে আনলাম না– মন খারাপ নিয়ে যাচ্ছি হঠাৎই চোখে পড়ল
রাস্তার পাশে সারি সারি পোস্টার সাজানো দেখে। কাছে গেলাম, দাঁড়ালাম,
চোখ ঘুরিয়ে দেখছি কত কত ছবি, একটা ছবিতে এসে
আটকে থাকলাম।
এটা কার ছবি? বিক্রেতাকে প্রশ্ন করলাম–
উনি আমার দিকে তাকিয়ে, কোন ক্লাসে পড়?
বললাম ক্লাস টেন–

আমি তো থ! এক মুখ
দাড়ি-গোঁফ ভর্তি ছবি দখেই দেখেই এত বড় হইলাম! পড়াশুনার বাইরের যে একটা জগত আছে ওটা
নিয়ে কম মাথা ঘামাতাম তার চেয়ে পাশের বাড়িতে চালতা খাওয়ার আসরে লবণ মাখিয়ে চালতা
কিংবা বড়ই খাওটাকেই অবসর সময়ের কাজ মনে করতাম।
চাচা এই ছবিটা কত?
১৫ টাকা –
কাচুমাচু স্বরে, চাচা আমার কাছেতো ৫ টাকা আছে!
না না মনু ঐ দিয়া
একটা ললিপপ কিইনা বাড়ি যাও গিয়া–
আমি অনুরোধের সুরে,ছোট কাকার পরিচয়,অনেক অনুনয় করার পরে এবং পরবর্তী
হাটে বাকী টাকা দিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতিতে হাতে পেলাম অবাক হওয়া ছবিটাকে।
বাড়ি আসলাম, এসেই রুমে টানিয়ে দিলাম যুবক রবীন্দ্রনাথকে।এক দৌড়ে ছোট কাকার রুমে সব
বলতে গিয়ে কাকাকে পেলাম না,কিছুটা আগ্রহ নিয়ে কাকার টেবিলে
সাজানো বই দেখতে থাকলাম,অনেক অনেক বই...তার মধ্যে একটা বই
নিলাম– শেষের কবিতা,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
কভার দেখেই মেজাজটা খিঁচে গেলো, ঐ একমুখ দাড়িগোঁফের ছবি,আরে আজ যে ছবিটা আনলাম ঐরকম ছবি দিয়ে কেন যে কভার করে না বুঝি না।
যাইহোক, বইটি নিয়ে আসি। রাতে খাওয়ার পাঠ চুকিয়ে টিভি রুমেও গেলাম না,যেন আলিফ-লায়লা,ম্যাকগাইভারও টানতে পারছিলনা যতটা
শেষের কবিতা টেনেছিল।আয়েশ করে শুয়ে সামনে ধরলাম বইটি।
বাবার ডাকগুলি রাতে
চিৎকারের মত শুনায়– এত রাতে আমার ঘরে কেন আলো
জ্বলছে – আমি চুপ!কি জানি কি কারণে আবার বাবাও চুপ করে গেলেন
– তখন রাত দুইটা,আমি শেষের কবিতার
লাবণ্যের লেখা চিঠি পড়ছি।যার এক পাতে রামগড় পর্বত শিখরে শোভনলালের সঙ্গে লাবণ্যের
বিবাহের খবর,অপর পাতে বন্যার লেখা দীর্ঘ কবিতা–
“তোমারে যা
দিয়েছিনু সে তোমারি দান
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত
করেছ আমায়।”
মিতার(অমিত)কাছে লেখা
বন্যার এই কাব্যচিঠি আমি কতবার যে কত ঢঙে পড়েছি,যেন
প্রতিবারই আমার অন্তরীক্ষে ঐরকম হৃদয়স্পন্দন সৃষ্টি করছিল।সময় চলে যাবার শব্দ
প্রতিদিন অদৃশ্য হয়ে জেঁকে বসে হৃদয় মাঝে,কিন্তু চলন্ত সময়
কেন কেন কেন মানুষকে টেনে নেয় ঐসব দ্রুতরথে?যেখানে প্রিয়
মানুষ থেকে শুধুই দূরে সরে আসা –যতবারই বলুক বিদায়,স্মৃ তিগুলো ফিরিয়ে দেয়া যায় কি? কিংবা কেউ কি নিতে
পারে আঁচল ভরে স্মৃতিসমেত ফেলে যাওয়া ভালোবাসা?
ঐরাত শেষ পর্যন্ত
ভেবেছি,কেন কেউ কাউকে বলে, হে বন্ধু বিদায়–
উত্তর হয়ত বলেছিল
ফিসফিস করে ঘরে ঝুলে থাকা যুবক রবীন্দ্রনাথ। শুনতে পাইনি– শুনলে অসীম ক্ষমায় শুধু ভালোমন্দ দেখতে পাওয়াটুকু নয়, ভালোবাসার সুরসমেত কোন হৃদয়ের জন্য অঞ্জলি উঠে আসতো এই হাতে,যে হাত আজও মুছে রাখছে প্রিয় যুবক রবীন্দ্রনাথের মুখচ্ছবি...========
বাংলা সাহিত্যে রাজনৈতিক উপন্যাসের আপাতত শেষ লেখক চলে গেলেন
হিন্দোল ভট্টাচার্য
নবারুণ ভট্টাচার্য। নবারুণদা নেই। যুদ্ধ পরিস্থিতি আছে।নবারুণদা নেই। আমাদের তথাকথিত সমাজের ঢ্যামনামি
আছে। নবারুণদা নেই। রাষ্ট্রীয় শোষণ আছে। নবারুণদা নেই। আমাদের তথাকথিত
বুদ্ধিজীবিরা আছে। আমাদের ভাষাকে আর কেউ সাহস করে আক্রমণ করবেনা। আমাদের প্রকাশভঙ্গিতে আসবেনা স্বাধীনতার
হাওয়া। আমরা হাসতে হাসতে থুতু ফেলতে পারব
না ক্ষমতা কাঠামোর গায়ে। আমাদের মেরুদন্ড
সোজা থাকবে না আর। তাতে কার কি এসে যায়? হার্বার্ট যখন চলে গেল, তখন কার কি এসে গেছিল?
শুধু শ্মশান কেঁপে উঠেছিল বিস্ফোরণে। এক প্রতিবাদ। না, আমরা তাঁর উপন্যাস পড়ে কখনো আমোদ করতে পারিনি, আমেজে
ঘুম আসেনি আমাদের, কেঁপে উঠেছি, শীত
করেছে আমাদের, নিজের আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারিনি। কষ্ট হয়েছে খুব। রাগ হয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। পারি বা না পারি, স্বপ্ন
দেখেছি কোনো এক সাবভার্সিভ ভাবে শুরু হয়েছে অস্বীকার করার লড়াই।
নবারুণদা নেই। নবারুণদা
আর লিখবেন না। তাতে কার কি এসে গেল? বাংলা
সাহিত্যে রাজনৈতিক উপন্যাসের আপাতত শেষ লেখক চলে গেলেন। তাতে কার কি এসে গেল?
খুব খারাপ একটা সময়ে উনি চলে গেলেন। যখন রাজনীতি মানে বুদ্ধিজীবিদের বেসাতি। খুব
যন্ত্রনায় ছিলেন নবারুণদা। অসুখটা তাঁর
হয়নি। অসুখটা আদতে হয়েছিল সমাজের।
আমাদের। ঘৃণায় চলে গেলেন আমাদের
দাদা। বাংলা উপন্যাসে, গল্পে এভাবে রাজনৈতিক মতাদর্শ না বলে যে সাবভার্সিভ রাজনীতির কথা বলা
সম্ভব, তার রাস্তা দেখিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল এমন এক ভাষার গদ্য, যা নেকুপিসু গদ্যের থেকে অনেক দূরের।
আমাদের সাব- অল্টারন সমাজের মত রাগী, অবহেলিত,
পরিশ্রমী, চাঁচাছোলা। আর এসবের কারণ ছিল তিনি
বুঝেছিলেন, এই সমাজের প্যান -অপ্টিকানকে টলিয়ে দিতে হলে,
আমাদের মার্জিনের ভাষায় কথা বলতে হবে, আমাদের
এক আধুনিক সান্ধ্য ভাষা তৈরী করতে হবে, যা মরমিয়া নয়,
বরং তেজস্ক্রিয়। অনেক বেশি এনার্কিস্ট। কারণ আজকের রাজনীতিতে এনার্কিজম ছাড়া আর কোনো
রাস্তা নেই, ব্যঙ্গ ও শ্লেষ ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই
আক্রমণের। তিনি জানতেন, শাসন যন্ত্র সব সহ্য করতে পারে, কিন্তু পারে না ভাষা
এবং সংস্কৃতির গেরিলা আক্রমনকে আটকাতে।
নবারুণদা, একজন গেরিলা যোদ্ধা। সাহিত্যের গেরিলা যোদ্ধা। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ
নয় বলেও যিনি জানেন, দেশ কোনো সীমানায় আটকে থাকে না,.দেশ আসলে এক বিরাট শ্রেণী-সংগ্রামের কুরুক্ষেত্র।
চলে গেলেন, খুব খারাপ একটা সময়ে। আমরা কাঙ্গাল হলাম। কিন্তু পারব না কি তাঁর ভাবনাকে
বাঁচিয়ে রাখতে? শত শত নবারুণ তো আমরাই। আমরাই হার্বার্ট।
আমরাই ফ্যাতারু। আমরাই সেই সব কথার সংলাপ, যেগুলি শুনলে
শাসকের বুক কেঁপে ওঠে।
কার কি আসে যায়, যদি আমরা এই আকালেও স্বপ্ন দেখি?
আমাদের মিষ্টি মিষ্টি
মস্তির সাহিত্যের বানচোতসুলভ মধ্যবিত্তপনা দেখে যিনি প্রতিনিয়ত মুচকি হাসতেন, আজ তাঁর শেষ যাত্রায় আমরা কি সত্যি কথা বলার কসম খেতে শিখব না? শিখব না মেরুদন্ড সোজা রাখতে অন্তত আমাদের সৃষ্টির ক্ষেত্রে?
একবার নির্দেশের ভুল
হয়ে গেলে,
আবার বিশুদ্ধ হতে কতদিন লাগে?
নবারুণদা, ভালো থাকবে না তুমি জানি। যতদিন
এই সমাজ ভালো থাকবে না, যতদিন এই পৃথিবী মানুষের বসবাসযোগ্য
হবে না, ততদিন তুমি ভালো থাকতে পারো না কমরেড।
সেলাম।
==============
চলে গেলেন সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, চলে গেলেন নবারুণ ভট্টাচার্য

------------

নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য ও
সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর একমাত্র সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্য। বামপন্থী ভাবাদর্শে
দীক্ষিত নবারুণবাবুর ছোট থেকেই লেখালিখির শখ ছিল। তাঁর কবিতার নমুনাঃ
১/ 'এই মৃত্যু উপত্যকা
আমার দেশ না,/ এই জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না,/ এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না,/ এই রক্তাক্ত
কসাইখানা আমার দেশ না!'
২/ ‘কেউ জানে না, জানার কথাও নয়। বহুতল বাড়ির মধ্যে আটকে পড়া ফড়িং ও প্রজাপতিদের বেরতে
দেওয়ার জন্য অনেক দুর্বোধ্য কাঁচ আমি পাথর ছুঁড়ে ভেঙে দিয়েছি।’
১৯৯৩ সালে হারবার্ট উপন্যাসের জন্য
তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান। এছাড়াও বঙ্কিম পুরস্কার, নৃসিংহ দাস পুরস্কার পান তিনি।
'হার্বার্ট' হল তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস। ১৯৯৩ সালে দেজ পাবলিশিং থেকে বই আকারে এটি
প্রকাশিত হয়। এ জন্য তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান। ২০০৫ সালে পরিচালক সুমন
মুখোপাধ্যায় 'হার্বার্ট' অবলম্বনে তৈরি
করেন সিনেমা। তাঁর আর একটি রচনা 'কাঙাল মালসাট' নিয়েও সিনেমা তৈরি করেছেন সুমনবাবু।
কৃতজ্ঞতাঃ মৃদুল দাশগুপ্ত

----------------
টুটুলের সাথে এবার কি নাসিমার দেখা হবে?
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
![]() |
আহসানুল হাকিম টুটুল |
মিতু আর টুটুলের মাঝখানে ছিলাম
আমি। মিতু মানে নাসিমা সুলাতানা এবং আহসানুল হাকিম টুটুল দু’জনই
আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মজার ব্যাপার তাঁদের ‘দাম্পত্য কলহে’র বিচারকের ভুমিকায়
আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হতো। তারা স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করে আমার কাছে নালিশ দিতো। টুটুলের
চেয়ে নাসিমা সুলতানাই বেশি ‘রাগ’ ছিলো।
টুটুলের ছিলো ‘অনু’রাগ!
![]() |
টুটুলের আঁকা নাসিমা সুলতানা |
তারা ঝগড়া করে আমার
বাসায় আসতো ভোনা-খিচুরি খেতে। আমার ছোট ভাই নোমান এক সময় খুব চমৎকার খিচুরি রান্না
করতেন। নজরুল ইসলাম বাবু, আনওয়ার আহমদ থেকে শুরু করে নাসিমা-টুটুলের
মতো অনেকেই সেই খিচুরির ভক্ত ছিলেন।
মিতু টুলুলের চেয়ে
বয়সে দু’ তিন বছরের বড় ছিলো। তাই, নাসিমা সাংসারিক কাজে একটু মাতাব্বরি বা
মুরুব্বিগিরি করতো। তাই নিয়ে তাদের ‘গৃহযুদ্ধ’। তারা তখন থাকে বাংলা মোটরের একটি
ফ্ল্যাটে। আমি গেলাম ‘কাজী’ হয়ে। কিন্তু মিতুর অভিযোগ- ‘তোমরা’ সব ছেলেরা একই
রকমের। আর টুটুল বলতেন- তোমরা তো কবি। এক সাথে বই বের করেছো।
আমি মজা করে বললাম,
‘তবু কেউ কারো নই’। এক পর্যায়ে নাসিমা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে আর টুটুলকে বাসা থেকে
‘তাড়িয়ে’ দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। তার আগেই ‘বুদ্ধদেব বসুর প্রবন্ধসমগ্র’ বইটি টুটুলের
কাছ থেকে ধার নিয়ে এলাম।
বইটি ফেরত দিতে দেরি হলো বলে
আবার আমার সাথে নাসিমার ঝগড়া। নাসিমা বললো- ‘তুমি আমাদের ঝগড়ার
সুযোগ নিয়ে বইটি ‘মেরে’ দিতে চাচ্ছো! টুটুল তাকে কিছুতেই থামাতে পারছিলো না।
এভাবেই নাসিমা আর
টুটুলের মাঝে আমি ছিলাম এক অন্য রকমের বন্ধু। আমি আর নাসিমা মিলে একবার একটি যৌথ
কবিতা লিখেছিলাম। সেই কবিতায় টুটুল ছিলো। নাসিমার মৃত্যুর পর ‘আরশি নগরে লালন-নাসিমা’
শীর্ষক কবিতাতেও টুটুলের নাম চলে এসেছে।
সেই টুটুলের সাথে 01715267703
এই ফোনে আর জীবনেও কথা হবেনা, ফেইসবুকে যোগাযোগ হবে না, শাহবাগে গেলে আর কোনোদিন দেখা
হবে না! কথা হবে না- বাংলাদেশের হৃদয় হতে, বিচিন্তা, শৈলী, অনন্যা, শিল্পপ্রভা, ঋত্বিক
নিয়ে। এ মির্মম কথাগুলো ভাবতেই ভয়াবহ মৃত্যুর হিম শীতল আমাকে স্পর্শ করে।
টুটুল টা টা। মানে টুটুল চলে
গেলো না ফেরার দেশে। রেখে গেলো কত স্মৃতি। শাহবাগের আজিজ মার্কেটে
আমার স্বরব্যঞ্জন আর পাঠাশালার পাশে টুটুলের প্রকাশনা ‘ঋত্বিক’ ছিলো। ফলে সারাদিন
ঘুরে ফিরে চলতো আমাদের চা আর আড্ডাবাজি। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, নাসিমার মৃত্যুর
পর টুটুলে একা আর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছিলো। ভেতরে ছিলো এক হাহাকার,
শুন্যতা! তাঁর দুই বোন- এক বোন থাকেন মগবাজার। আরেক জন সুইডেনে। আমি ২০০৩ সালে ষ্টকহোমে
গেলে তাঁর বোনটি বড় বোনের মত অনুরোধ করেছিলে্ন যেনো তার ভাইটিকে একটা বিয়েশাদীর ব্যবস্থা
করি। টুটুলের সাথে দেশ-বিদেশের অনেক সুন্দরী এবং বিখ্যাতদের আন্তরিকতা ছিলো। কিন্তু
নাসিমার বৃত্ত থেকে টুটুল আর বেরিয়ে এলেন না। সারা জীবন নাসিমার স্মৃতি নিয়েই বাকী
আঠারো বছর কাটিয়ে দিলেন।
নাসিমা সুলতানার মৃত্যুর পর বাংলা
একাডেমি থেকে সেলিনা হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাঁর জীবনী লেখার
জন্য আমাকে দ্বায়িত দেয়া হয়েছিলো। কাজটি সিংহ ভাগ শেষ করেও সমাপ্ত করতে পারিনি। কিন্তু
টুটুল ঠিকই তাঁর ‘ঋত্বিক’ থেকে দারুণ প্রডাকশনে ‘নাসিমা সুলতানা সমগ্র' বের করেছেন।
কথা ছিলো আমরা কুষ্ঠিয়ার আমলা পাড়ায় যাবো। নাসিমার পরিবারের
সাথে কথা বলে তাঁর শৈশব-কৈশোর জানবো, কবরের ছবি তুলেবো। কিন্তু তা আর হলো না।
টুটুল নিজেই কবরে চলে গেলেন। সেখানে কি টুটুলের সাথে নাসিমার দেখা হবে?
=====================
[আজ হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু বার্ষিকী! মৃত্যুর মাত্র ক’দিন আগে নিউ ইর্য়কের হাসপাতালে আমার তোলা ছবি আর আমার দেখা অচেনা এক হুমায়ূন আহমেদ।]
ঘুমন্ত জাদুকর: যদি মন কাঁদে, তুমি চলে এসো ...
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
নিউ ইর্য়ক থেকে কবি শহীদ কাদরী ফোন করে জানতে
চাইলেন, মুক্তধারার বইমেলায় যাচ্ছি কিনা?
আমি
বললাম- ‘না, শহীদ ভাই,
যাবোনা’। কবি শহীদ কাদরী নরম সুরে বললেন,
‘চইল্যা
আসো। দেখা হবে, আড্ডা হবে’। আমি বললাম,
‘গেলে
ভালোই হতো। আপনার সাথেও দেখা হতো, হুমায়ূন ভাইকেও দেখতে পারতাম। তা ছাড়া
তাঁর আঁকা চিত্র প্রদর্শণীও দেখার ইচ্ছে আছে’। এবার জোরালো কন্ঠে বললেন- ‘মিঞা, চইল্যা আসো’।
গ্রিহায়ন্ডে টিকিট কেটে টরন্টো থেকে ২৮ জুলাই
চলে গেলাম নিউ ইর্য়কে। উঠলাম দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি সাহেদুল ইসলামের বাসায়।
রাতটা পাড়ি দিয়েই সকালে পাতাল ট্রেনে উঠে ছুটে গেলাম ম্যানহাটনের ১ এভিনিউয়ের ২৮
ষ্ট্রিটের বিশ্ব বিখ্যাত ক্যান্সার হাসপাতাল বেলভ্যুতে। রিসিপশনে গিয়ে ‘হুমায়ূন আহমেদ’
বলতেই
একজন দাঁড়িওয়ালা বাঙালি ভদ্রলোক বললেন, এদিকে আসুন। তিনি ভিজিটর পাশ দিয়ে
চমৎকার ভাবে বুঝিয়ে দিলেন কি ভাবে কোথায় যাবো। প্রায়ই বন্ধু মাজরুল ইসলামকে ফোন
করে খোঁজ-খবর নিতাম। তখন ঠিকানাও নিয়ে নিয়েছিলাম। সেই মোতাবেক 10W43তে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি,
শাওন
ভাবী হাসপাতালের জুনিয়র এক ডাক্তারের দেয়া কাগজপত্রে সই করছেন। ভাবীর মুখটা খুবই
মলিন। টুকাটাক কথার পর তিনি চলে গেলেন বাইরের ওয়েটিং রুমে। হুমায়ূন ভাই আইসিইউতে
শাদা বিছানায় শুয়ে আছেন। বেদনার চাঁদরটা পায়ে জড়ানো। খালি গা। গায়ের রংটা কালচে।
মুখটা সামান্য ফোলা ও ফ্যাকাশে, খোঁচা খোঁচা দাড়ি। আমার দেখা হুমায়ূন
আহমেদের সাথে এই তারে আটকানো, ঘুম পাড়ানো হুমায়ূন আহমেদ মিল নেই। মনে
হচ্ছে, বিশাল মাপের লেখকটা এতো ছোটখাটো হয়ে গেছেন! একেবারে অচেনা লাগছে।
অসংখ্য বিদ্যুতের জটিল তারের মতো নানা ধরনের টিউব-পাইপ দিয়ে যেনো সারা শরীরে
বাঁধা। ঝুলছে সেলাইন। পাশে অক্সিজেনের নল। নাকে-মুখে পাইপ,
বুকে-পিঠে
টিউব, শরীর জুড়ে টিউব-পাইপ জড়ানো হুমায়ূন আহমেদ;
নাকি
অন্য কেউ? আর তার পাশে অত্যাধুনিক মেডিক্যালের সক্রিয়
যন্ত্রপাতি। হুমায়ূন আহমেদ অচেতন আর যন্ত্রপাতিগুলো সচেতন। সার্বক্ষণিক মনিটর
করছে। উঠানামা করছে মিটারের দাগগুলো। জ্বলছে লাল-নীল-হলুদ বাতি।
দুই পর্বে ১২টি কেমো থেরাপি এবং দ্বিতীয় বার
অপাশনের পর ইনফেকশনের কারণে পুনরায় হাসপাতালে আসা। অপারেশনের ক্ষত স্থানে সেলাই
দিয়ে বাতাস ডুকেছে, একটু পেকেও গেছে। পানি জমেছে ফুসফুসে। শরীরে
সংক্রমিত হয়েছে এক অজানা ভাইরাস। ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন?
এই
ব্যাকটেরিয়াকে বলা হয় মার্সেরা। এই ব্যাকটেরিয়া প্রথমে লাং ও পরে রক্তে সংক্রমিত
হয়ে হয়তো মাছের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে তার শীরা-উপশিরায়। বেলভ্যু হাসপাতালের অনকোলজি
বিভাগের প্রধান ডা. জেইন এবং ক্যান্সার সার্জন জজ মিলারেরা ভাইরাসটি চিহ্নিত করতে
না। বুকে ক্রমশই বেড়েছে যন্ত্রণা। বেড়েছে
হার্টবিট, প্রসার, ডাইবেটিক। বেড়েছে অস্থিরতা। একী
মৃত্যুর পূর্বাভাস? মৃত্যুর শীতল স্পর্শে কী হুমায়ূন আহমেদ ভয়ে
আতঙ্কে উঠেছেন! তাই রাত দেড়টায় শরীরের সব তার-মার ছিঁড়ে ছুটে যেতে চেয়েছেন নুহাশ
পল্লীতে। কাজল ছুটে যেতে চেয়েছেন মা-জননী আয়শার কাছে।
টোকন ঠাকুরের নরম নার্সেরা দৌঁড়ে এসে রাত
তিনটার দিকে ‘ঘুম পাড়ানিয়া মাসিপিসির’
মতো
স্বপ্নের জাদুকরকে স্বপ্নের দেশে পাঠিয়ে দ্রুত কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা
করলেন। সারা রাত ছটফট করলেন শাওন ভাবী। কী করবেন, ভেবে কূল কিনার না পেয়ে মহা সমুদ্রে
হাবুডুবু খাচ্ছিলেন।
আমি নার্সের অনুমতি নিয়ে হাতে গ্লাফস,
মুখে
মাক্স, সারা গায়ে হালকা ব্লু গাউন পরে কাঁচে ঘেরা ঘরে ঢুকালাম। ঢুকে
সংজ্ঞাহীন নাকি ঘুমন্ত হুমায়ূন আহমেদকে দেখে জীবন্তহুমায়ূন আহমেদকে মনে পড়লো। মনে
পড়লো পরাজিত সম্রাট হুমায়ুনের কথা। মনে পড়লো আমাদের এক জীবনের স্মৃতি।
সর্ব শেষ দেখার স্মৃতি। ২০০৯-এ ঢাকায় গিয়ে ফোন
তাঁকে করতেই বললেন, `চলে আসো। চলে আসো। আড্ডা দেবো`। গেলাম। রোজার দিন। ধানমন্ডির বাসায়
গিয়ে দেখি, ড্রইংরুম ভর্তি লোকজন,
লেখক-সাংবাদিক,
প্রকাশক।
তিনি পাটি বিছিয়ে আসর পেতে আড্ডা দিচ্ছেন। কিন্তু সে আড্ডায় কেন যেন প্রাণ পেলাম
না, যে প্রাণের ছোঁয়া পেতাম বিটিভিতে প্রথম ধারাবাহিক `বহুব্রীহি`
অথবা
`এইসব দিনরাত্রি`র স্ক্রিপ্ট পাঠ/মহড়ার আয়োজনগুলোতে;
আতাহার
খানের শ্যামলীর বাসার আড্ডায় কিংবা তাঁর আজিমপুরের বাড়িতে অথবা ভার্সিটির হলে
প্রভোস্টের বাসভবনে আসরে।
যাহোক, ইনটেনসিভ কেয়ার থেকে বেরিয়ে আসতেই
নার্স বার বার সাবধান করে দিলেন। মারাত্মক ভাইরাস আছে। আমি যেনো হাত-মুখ ভাবে ধুয়ে
নিই। আমি আবার ইনটেনসিভ কেয়ার রুমে ঢুকে নার্সের নির্দেশ মতো হাত ধুয়ে ওয়েটিং রুমে
যেতে যেতে ভাবলাম, একটি কাছিম বাঁচে তিন শ’
বছর
আর মানুষ মৃত্যু কতো দ্রুত! সেই মৃত্যু-শকুন যেনো আইসিইউ কাঁচের জানালা বসে
উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। তখন আমার মাথার ভেতর ঘোরপাক খাচ্ছে কয়েকটি পঙক্তিঃ
‘কষ্টে ক্লান্ত যোদ্ধা;
পরাজিত
সেনা
চশমা পরছি; যাচ্ছে না তো চেনা।
টিউপ-পাইপ শত নলে লতা
বিদ্যুতের তারে তৈরি জটিলতা
অসংখ্য দড়িতে কে বেধেঁছে তাকে?
নকল নিদ্রায় ডাকছে সে মা’কে।
ভলব্যু-প্রবাসে কুসুম কাঁদছে...
কাজল কী আজ পাগল সাজছে?
চন্দ্রবাতি নেই নিভে গেছে গ্রাসে
চাঁদ-খেকো কৃষ্ণ অমাবস্যা হাসে
ভাইরাস রক্ত স্রোতে কী অদ্ভূত
উকিঝুঁকি মারে মৃত্যু যমদূত।
সমুদ্র সম্রাট হুমায়ূন আজ
পরাজিত জ্বলে নীল কারুকাজ’।
ওয়েটিং রুমে শাওন,
মাজহার,
হুমায়ূন
ভাইয়ের এক বাল্যবন্ধু আর জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের এক কর্মচারী। পরে এলেন
জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, পূরবী বসু, লিজি রহমান। তারা কী করবেন,
উৎকন্ঠায়
কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। শাওন ভাবী, মাজহার ভাই দু’জনেই দুশ্চিতায়,
অনিদ্রায়
ক্লান্ত। কিন্তু ভেঙে পড়েন নি। শাওন ভাবী ভেজা কন্ঠে চোখ মুছতে মুছতে বললেন,
‘আর
নিজেকে সামালাতে পারছিনা। কাল রাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বার বার বলছিলো- কুসুম,
নুহাশ-নিষাদ-নিনিত
কই?’
তাঁরা প্রতি রাতে পালা করে হাসপাতালে ডিউটি
করেন। ঠিক মতো খাওয়া নেই, ঘুম নেই। বিশ্রামের তো প্রশ্নই উঠে না।
ওয়েটিং রুমের সোফায় কোনো ভাবে রাত পাড় করেন। তার চিহ্ন পেলাম,
পাশের
সোফায় চাঁদর-বালিশ ছড়ানো। মাজহার ভাই বিছানা গুছিয়ে পলিথিন ব্যাগে ভরতে ভরতে
ভাবীকে সাহস-শান্তনা দিচ্ছেন আর একের পর এক ফোন রিসিফ করছেন। আমি শাওন ভাবীকে
বললাম, আমি তিন দিন থাকবো। প্রয়োজন হলে জানাবেন,
আমি
অন্তত এক রাত ডিউটি শেয়ার করবো। কিন্তু ডাক্তারেরা বলেছেন,
আপাতত
কেউ থাকার প্রয়োজন নেই।
আমি পরদিন দুপুরে আবার গেলাম। কেউ নেই।
নিরিবিরি শান্ত কেবিন। কাঁচে ঘেরা আইসিইউ রুমের দরজা আটকানো। হিমু-মিসির আলি হয়ে
বাইরে থেকে দেখলাম, জন্মমৃত্যর সন্ধিক্ষণে আমাদের জনপ্রিয় হুমায়ূন
আহমেদ।
দিনের পর দিন, রাতের পর রাত,
মাসের
পর মাস দীর্ঘ বছর ধরে কী অসীম ধর্য্য নিয়ে মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার
সেন্টার থেকে শুরু করে বেলভিউ হসপিটাল পর্যন্ত শাওন আর মাজহার সার্বক্ষণিক নিবিড়
পরিচর্যায় হুমায়ূন ভাইকে নতুন জীবন দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন,
কিন্তু
শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচাতে পারলেন না। কালো-ক্যান্সার তাঁকে নিয়ে গেলো অন্য এক
ভূবনে।
(জঃ নভেম্বর ১৩,
১৯৪৮
।। মৃঃ জুলাই ১৯, ২০১২)
----------------
হাতে লেখালেখির সমস্যা/
ফজলে রাব্বী

ইমেইল করছি সেই ৯১
সাল থেকে,
সেটা ইংরেজিতে। বই লিখতে তখন থেকে বাংলা বিজয় ব্যবহার করছি। তবুও
কম্পিউটারের ভিতরের খবর জানি না। বুঝতেও পারি না।
ইমেইল বা ফেসবুকে বাংলা লিখতে পারতাম না। সোশিয়াল মিডিয়ার কথা খুব শুনি,
অনেকেই অভ্র ব্যবহার করেন। আমার মনে হয়, আসলে
এটা ইংরেজি হরফে বাংলা লেখা। মনে হয় যারা ইংরেজি হরফ চেনে না তারা যাতে পড়তে পারে
তার জন্য। এই বাংলা আসলে ইংরেজি হরফে বাংলা। এক সময় আরবি হরফে বাংলা লেখার চেষ্টা
হয়েছিল, এমন কি ইংরেজি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবও করেছিলেন
কেউ কেউ। বা্গংালি তার বিরোধিতা করেছে।নিজস্বতা রক্ষা করেছে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়া পারেনি। তাদের ভাষা
রোমান হরফে লিখতে হয়, লিখতে হয়েছে। আমার মতে অভ্রকে প্রশ্রয়
দেওয়া অর্থ ইংরেজি হরফে বাংলা লেখা। তার চেয়ে ইংরেজি হরফে লেখা কি ভাল না? ডিজিটাল বাংলা হচ্ছে কিন্তু আসল কাজ কিছু হচ্ছে না, এমন
বাংলা ফন্ট কেউ তৈরি করতে পারলেন না যা দিয়ে বাংলা টাইপ করব, ইমেইলে, ফেসবুকে বা লেখায় সেটা বাংলাই থাকবে। অন্য
কারো নিকট পাঠালে অপাঠ্য হবে না। যেমন ইংরেজি টাইপ করলে পাই ইংরেজি। ইংরেজিতে
কীবোর্ড সারা দুনিয়ায় একটাই; আরবী কীবোর্ডও একটা, রাশিয়ানরা রুশ ভাষায়, রুশ হরফে কম্পিউটার চালায়,
স্প্যানিশরা স্প্যানিশ কম্পিউটার চালায়। তাদের কীবোর্ড বিভিন্ন
নয়। তবে বাংলা কীবোর্ড একটা না কেন?
এর রহস্্য আমি বুঝি না। এই কাজতো সরকারকে করতে হবে। বাংলাদেশে সরকারি ভাবে একটা বিজ্ঞান সম্মত
বাংলা কীবোর্ড আইন করে চালু করা হয় না কেন , ইংরেজি থেকে বাংলা ও বাংলা থেকে
ই্ংরেজি অনুবাদ সফটওয়ার তৈরি করা হয়না কেন। বাংলা ওসিআর তৈরি করা দরকার। বাংলা
একাডেমী প্রকাশিত সকল বইকে ই-বুকে প্রকাশ করা যেতে পারে এবং সেগুলি অতি সুলভে বা
নামমাত্র মূল্যে আমাজনের মাধ্যমে বিক্রি করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তৃতীয়
মাত্রায় নানা দৃষ্টিকোন থেকে বাংলা ভাষা ও কম্পিউটার নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক করা যেতে পারে।
===========
রেজা সেলিম


কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
বাগেরহাটের তৎকালীন রামপাল উপজেলার (পরবর্তীতে রামপাল ও মোংলা দুই ভাগে বিভক্ত)
সাহেবেরমেঠ গ্রামের বিখ্যাত শেখ পরিবারের বংশোদ্ভূত। তাঁর বাবা শেখ মুহম্মদ
ওয়ালিউল্লাহ উক্ত অঞ্চলের একজন খ্যতনামা চিকিৎসক ছিলেন। মোংলা পোর্টের চিকিৎসক
হিসেবে তিনি ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষভাবে সহায়তা করেন। যার
পরিণতিতে তিনি পাকিস্তান সেনাদের দ্বারা অগাস্ট মাসে আটক ও নির্যাতিত হন ও ১৬
ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত যশোর জেলে কারাবাস করেন।
রুদ্রের নানা শেখ মুহম্মদ ইসমাইল ছিলেন মোংলা অঞ্চলের একজন খ্যাতনামা ও ধনাঢ্য ব্যক্তিত্ব। এই পরিবারের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ছিল ব্যাপক। রুদ্রের জীবনেও নানা বাড়ির প্রভাব পড়েছিল। খুব দ্রুত বঞ্চিতের পাশে দাঁড়ানো বা দেশের অস্থির রাজনৈতিক বলয়ের নাগপাশ থেকে দেশের মানুষের মুক্তির চিন্তা সমভাবে রুদ্রের জীবনে উপস্থিত ছিল যা তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ পড়াশুনা
শুরু করেন মোংলার মিঠেখালি গ্রামের পাঠশালা থেকে। পরে তিনি মোংলার সেন্ট পলস
স্কুলে কিছুদিন পড়াশুনা করে সবশেষে ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে
৪টি বিষয়ে লেটার সহ বিজ্ঞানে প্রথম বিভাগে এস এস সি পাশ করেন। ঢাকা কলেজে উচ্চ
মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান)-সহ এম এ পাশ করেন বাংলা
ভাষা ও সাহিত্যে যথাক্রমে ১৯৮০ ও ১৯৮৩ সালে।
শিক্ষিত, মেধাবী, মার্জিত ও কোমল মনের মানুষ ছিলেন কবি রুদ্র।
রাজনৈতিকভাবে ছিলেন গভীর সচেতন। ৭৫ পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাজনীতি যখন মৌলবাদী
স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের উপর ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে উঠছিল, তখন
শত প্রতিকুলের মধ্যে থেকেও রুদ্র তাঁর অমর একটি কবিতায় লিখেছিলেন, ‘জাতির পাতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন’। এই
লাইনটি আজও কতো প্রাসঙ্গিক, পাঠকমাত্রেই তা উপলব্ধি করবেন।
তাঁর এই কবিতার অপর একটি চরন, ‘ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার
রক্তাক্ত জাতির পতাকা’! আমাদের জাতীয় পতাকার এমন অবিস্মরণীয়
চিত্রকল্প একজন অসধারন সৃজনশীল কবির পক্ষেই রচনা করা সম্ভব।
তরুন সমাজের কাছে রুদ্র মুহম্মদ
শহিদুল্লাহ তাঁর কবিতা ও ব্যবহারগুণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। বিশেষ করে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কবি রুদ্র তাঁর রাজনৈতিক ভাবনা ও কাব্য চিন্তা মিলিয়ে
নেতৃত্বের আসন নেন। সেই সময়ে তাঁর
চারপাশের বন্ধুদের কাছেও তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। তাঁকে ছাড়া কোন আড্ডাও যেন
অপূর্ণ ছিল। বন্ধুদের নিয়ে তিনি গঠন করেন ‘রাখাল’ নামে
একটি সংগঠন। রাখালের মুল চেতনা বক্তব্য ছিল, ‘কবিতা ও
রাজনীতি একই জীবনের দুই রকম উৎসারণ’।
পরবর্তীকালে জাতীয় কবিতা উৎসব
অনুষ্ঠানেরও অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি।
যদিও তাঁর সৃজনশীল রচনার বয়স খুব কম
তবুও তাঁর রচনা সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তাঁর জীবদ্দশায় মোট বই বেরিয়েছে ৭টি। ১৯৭৯
সালে প্রকাশিত হয় রুদ্রের প্রথম কবিতার বই ‘উপদ্রুত উপকূল’। পরবর্তী ৬টি কবিতার বই হল, ‘ফিরে চাই স্বর্ণ গ্রাম’
(১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র’ (১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৬),
‘গল্প’ (১৯৮৭), ‘দিয়েছিলে
সকল আকাশ’ (১৯৮৮), ‘মৌলিক মুখোশ’
(১৯৯০)। তাঁর মৃত্যুর পর পরেই প্রকাশিত হয় ‘এক
গ্লাস অন্ধকার’ (১৯৯২) ও একটি নাট্যকাব্য ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ (১৯৯২)।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে মৃত্যুর
কিছুকাল আগ পর্যন্ত রুদ্র মোংলায় থাকতেন। তিনি বেশ কিছু গানও রচনা করেছেন।
মোংলা-রামপালের বেশ কয়েকজন স্থানীয় যুবকদের নিয়ে তিনি ‘অন্তর বাজাও’ নামে একটি গানের দল গঠন করেছিলেন। বেশিরভাগ
গানে তিনি নিজেই সুর দিয়েছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম ‘ভালো আছি ভালো থেকো’–খ্যাত ‘আমার
ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে’। গানগুলি দুই
বাংলায় বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-র একটি
জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। এছাড়া তাঁর রচনা সামগ্রীও প্রকাশিত
হয়েছে। রুদ্রের কবিতা নিয়ে অনেক লেখক গবেষক কাজ করেছেন।
কবির আজ এই প্রয়ানের দিনে আমাদের
শ্রদ্ধার্ঘ্য। --------------
সরদার ফজলুল করিম: স্যার, শান্তিতে থাকুন
সরকার আমিন
বাংলাদেশের সবচে নিরহংকারী মানুষটি গতকাল চলে গেলেন। তিনি দার্শনিক প্রফেসর
সরদার ফজলুল করিম। আমার দেখা সেরা মানুষ। ‘প্রতিটি ঘটনা বা দুর্ঘটনা মানুষকে শিক্ষা
দেয়’-
তিনি আমার গুরু ছিলেন, আছেন্, থাকবেন। শাহনাজ মুন্নী তাকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি
বানিয়েছে। ডকুমেন্টারিতে আমিও ছিলাম। সেখান থেকে এই ছবিটি।
স্যার, শান্তিতে থাকুন।
-ফেইসবুক থেকে
যেভাবে লেখা হলো 'রান্নাঘর' সিরিজ
=======================
মৃদুল দাশগুপ্ত
দর্পণ যেমন আসলে কিছুই ধরে নেই, এমনকি কোনো প্রতিবিম্বই সে বারবারের জন্য
জমা রাখে না, আমার বিশ্বাস কবিতাও এমনই। সুদূর আয়না সে, যেন একটি মুখের ইশারা পাল্টালো
শুধু, এই-ই। সংখ্যালঘুর গুপ্ত লোকাচারের সংকেত তা, কবি ও কবিতা পাঠকের; সর্বজনগ্রাহ্যতার
অসম্ভব স্বপ্নে নয়, আগামী পৃথিবীর আশায়। মূল স্রোতের উল্টো দিকে এই আত্মগোপনকারীর
ভূমিকাই কবির।
শৈশব থেকে আমি যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলাম তা ছিল গুপ্ত, জন্ম
থেকেই তা ছিল নিষিদ্ধ। এ দলের সব কার্যক্রম পরিচালিত হতো গোপনে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক
পথের রাজনৈতিক দল ছিল না। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল লক্ষ্য।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, পথটা ঠিক ছিল কি না। কিন্তু ওই যে গোপন বিষয়টা, গোপন মানসিকতা_ওটা
আমার কবিতার মগজের ভেতর ঢুকে গিয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, আমার ভালোবাসা নিভৃতে বেড়ে
উঠছে; আমার বেদনা, আমার প্রতিবাদ সেও গোপনের অধিকারে থাকে। এমনকি আমি যে হিংসার কথা
বলব_ওটাও গোপনে বলব, আড়ালে বলব। কারণ আমি মনে করি, তুমি প্রকাশ্যে যে কথাটা বলছ তা
না বলে তুমি যদি তা আবরণ দিয়ে বল, গোপনে বল; তবে সেটা আরো ভারী, আরো বলিষ্ঠ হবে, আরো
বেশি গভীরতা নিয়ে স্পর্শ করবে। 'বলি কী ধর্মের কথা/ যত ধর্ম তত দুর্ঘটনা'। আমার মতে
এই গোপনীয় বিষয়টা ঘুরে ঘুরে আমার কবিতার ভেতরে কিভাবে কিভাবে যেন এসে যায়।
যা হোক, আমার
'রান্নাঘর সিরিজের' কবিতাগুলো লেখার প্রেক্ষাপটে ফিরে আসি। সাংবাদিকতার কাজে আমাকে
নানা জায়গায় যেতে হয়। একবার বাংলাদেশ ও ভারতের বর্ডারের কাছাকাছি একটা জায়গা হঠাৎ
লক্ষ করলাম, ফুটপাতে থাকে যে পরিবারগুলো, তারা তিনদিকে তিনটি ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে
রান্না করছে। আমার মনে হলো, চুলোর এই মুখটাই পরিবারের প্রতীক। সারা পৃথিবী একটা রান্নাঘরের
মতো। আমি যেন পৃথিবীটাকে একটা ক্ষুদ্র চুলোর মধ্যে দেখতে পাচ্ছি! আমার মনে হয়, সারা
পৃথিবীই একটা রন্ধনশালা। 'রান্নাঘর সিরিজে'র কবিতাগুলোর উৎপত্তি ওখান থেকেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন